বাংলাদেশে পূজার সময়টা কেমন কাটল নেপালি শিক্ষার্থীদের

নেপালি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে পূজা উদ্‌যাপন করেন নিজেদের মতো করে

নেপালি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে পূজা উদ্‌যাপন করেন নিজেদের মতো করেছবি: সংগৃহীত

নেপাল থেকে যে শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে পড়তে আসেন, তাঁদের প্রায় সবাই হিন্দুধর্মাবলম্বী। পূজার ছুটিতে দেশে যাওয়ার সুযোগ তাঁদের হয় না। নিজ দেশের বাইরে, একটি ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব উদ্‌যাপনের অভিজ্ঞতা একই সঙ্গে ‘মন খারাপ করা’ ও আনন্দদায়ক। নেপালি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এমনটাই জানা গেল।

নেপালি শিক্ষার্থীরা সাধারণত নিজেদের মতো করেই ছোট পরিসরে ক্যাম্পাসে পূজার আয়োজন করেন। প্রয়োজনীয় উপকরণের একটা অংশ স্থানীয় বাজার থেকেই সংগ্রহ করেন, অনেক কিছু নিজেরা বানিয়েও নেন। এই আয়োজনের মাধ্যমে তাঁরা নিজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখার চেষ্টা করেন, আবার বাংলাদেশি সংস্কৃতির সঙ্গেও জুড়তে চেষ্টা করেন। অনেকে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে উপভোগ করেন বাংলাদেশের পূজা আয়োজন। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী বিষ্ণু সাথি বললেন, ‘বাংলাদেশে এ নিয়ে আমি চতুর্থবার পূজা উদ্‌যাপন করছি। যদিও এখানকার পূজার সঙ্গে আমাদের দিকের পূজার কিছু পার্থক্য আছে। তারপরও এটা আমার কাছে উপভোগ্য। পূজার প্রস্তুতি হিসেবে কেনাকাটাসহ অন্যান্য নানা বিষয়ে আমি বাংলাদেশি বন্ধুদের অনেক সহযোগিতা পাই। সব মিলিয়ে বেশ ভালো একটা অভিজ্ঞতা হয়।’

বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তার কথা ভিনদেশিরা সব সময়ই আলাদা করে বলেন। নেপালি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েও শোনা গেল একই সুর। অনেকেই স্থানীয় বন্ধুদের সঙ্গে পূজা উদ্‌যাপনের আমন্ত্রণ পেয়েছেন। শুধু পূজা নয়, যেকোনো ধর্মীয় কিংবা সাংস্কৃতিক উৎসবেই বন্ধুরা আমন্ত্রণ জানায়, জানালেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষার্থী রিতু চালিসে। রিতু বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ অনেক অতিথিপরায়ণ। আমি শুরুতে যখন বাংলা ভাষা জানতাম না, তখন সবার সঙ্গে মিশতে চাইতাম না। কিন্তু ভাষাটা শেখার পর মানিয়ে নেওয়াটা সহজ হয়ে গেছে। মানুষের সঙ্গে মিশেও অনেক ভালো লেগেছে। পূজা উদ্‌যাপনের সময় অনেক বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরার সুযোগ পাই, এটা খুব ভালো লাগে। নেপালের ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার কিছু মিল আছে, এই ব্যাপারটাও আমার ভালো লাগে।’

কথা হলো হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী লাভরাজ আচার্যের সঙ্গে। বললেন, ‘ভারত বা বাংলাদেশ থেকে আমাদের সংস্কৃতি একেবারেই আলাদা। দুর্গা পূজা না বলে আমরা বলি “বড়া দশে”। এখানে যেমন বড় বড় মণ্ডপে পূজা হয়, আমাদের এ রকম হয় না। দশ দিনই আমরা উদ্‌যাপন করি। তবে দশমির দিন মা–বাবা–ভাই–বোনের হাত থেকে আশির্বাদ নিই। দূর দুরান্ত থেকে আত্মীয়স্বজনেরা বাসায় আসে, আমরাও যাই। আমাদের পূজা আর বাংলাদেশের পূজা উদ্‌যাপনের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। তবে ভিনদেশে নিজ সংস্কৃতির চর্চা করতে পারাটা একটা ভালো অনুভূতি দেয়।’

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *